|
Forget Cricket Talk about anything [within Board Rules, of course :) ] |
November 26, 2016, 01:33 AM
|
|
Moderator
|
|
Join Date: May 31, 2010
Location: Dhaka,BD
Favorite Player: Tamim,Ash,Mash,Shakib
Posts: 5,153
|
|
কুমিল্লার ‘মাতৃ ভাণ্ডার’ রসমালাই, একটি বিশ্বরেকর্ড এবং জিআই নিবন্ধন
Quote:
১৪৯৮ সাল। সম্পূৰ্ণ সাগর পথ পাড়ি দিয়ে ভারতে এসে উপস্থিত হলেন ইতিহাসের প্ৰথম ইউরোপিয়ান পর্তুগীজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা। ভারতে দলবল সহ তিনি অবস্থান করেছিলেন ১৫০৩ সাল পর্যন্ত। সাগরে ঘুরে ঘুরে যারা সভ্যতার নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে চলছেন, দুধের সাথে একটু টক দিলেই যে দুধ ছানা হয়ে যাবে- এই সিম্পল টেকনোলোজি তাদের না জেনে থাকবার কোন কারণ ছিল না। পর্তুগীজদের কাছ থেকে ভারতীয়রা শিখে নিলেন ছানা বানানোর কৌশল। বৈদিক যুগে দুধ ও দুধ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি ঘি, দধি, মাখন ইত্যাদিকে দেবতার আহার হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এক বালতি দুধে এক ফোঁটা চনা (গো মূত্র) ইজ এনাফ ফর সব্বোনাশ। অর্থাৎ দুধে এসিড যোগ করলেই মাইক্রো-বায়োলজিক্যাল ফারমেন্টেশন দ্বারা দুধের প্রোটিন জমাট বেঁধে যায়, আর এই জমাট বাঁধা অংশটুকুই ছানা।
দুধ নষ্টভ্রষ্ট হয়ে ছিন্নভিন্ন প্রক্রিয়ায় এটা তৈয়ার করা হতো, তাই কথ্য বাংলায় তার আদি নাম ছিল ‘ছেনা’, আমরা এখন যাকে লিখছি ‘ছানা’। ছানা তৈরি’র পদ্ধতি প্রাকৃতিক নয়, দুধ বিকৃত করে কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত হয় ‘ছানা’, তাই তৎকালীন ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণ মত দিলেন না না, দেবতা পূজায় ছানা নিবেদন -‘ইহা শাস্ত্রসম্মত নহে’। তাই দেবগণ যখন ছানা গ্রহণ করিবেন না, তখন মানবকুল আর বাসিয়া থাকিলেন না পুণ্যি লাভের আশায়! দেবগণ স্বর্গ হইতে লজ্জাভিভূত হইলেন শর্মে, এদিকে মানবকুল নিয়োজিত হইলেন ছানা আস্বাদন কর্মে। অবশ্য ছানা আবিষ্কারের আগেই ভারতবর্ষে বেসন, নারকেল ও মুগের ডালের সঙ্গে চিনি সংযোগে মিষ্টান্ন তৈরির রীতি প্রচলিত ছিল। ভারতবর্ষের সবচেয়ে প্রাচীন মিষ্টি মতিচূর লাড্ডুর বয়স প্রায় দুই হাজার বছরেরও বেশি। অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে এসে চিনির সঙ্গে ছানার রসায়নে জন্ম হয় আধুনিক সন্দেশ ও রসগোল্লা। ছানা দ্বারা তৈরি প্রথম মিষ্টান্নটি নিঃসন্দেহে ছিল সন্দেশ, কেননা ছানার সাথে কিঞ্চিৎ চিনির যোজন মানেই ’ছানার সন্দেশ, তাই সেই ইতিহাস আর গুগল ইঞ্জিনে স্টার্ট না দিয়ে, নিজেই তা বলে দিলাম।
প্রচলিত অর্থে ‘সংবাদ’ মানে হচ্ছে ‘খবর’ যা মূলত একটি ফারসি শব্দ, যার অর্থ হতে পারে – পরস্পর কথাবার্তা, ভাব বিনিময়, ঘটনা সমূহের বিবরণ প্রভৃতি। আপনি যখন কোন ‘খবর’ কারো বাড়ি পর্যন্ত বহন করে নিয়ে আসেন, তখন আপনাকে মিষ্টান্ন কিংবা সন্দেশ না খাইয়ে তিনি বিদায় দিলে, বঙ্গীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য ধুলোয় মিশে যায়। তাই যেহেতু ‘খবর’ পরিবেশন মারফত আপনি ‘সন্দেশ’ খেলেন, তাই ‘খবর প্রকাশ’ মানেই হয়ে গেলো ‘সন্দেশ’। অর্থাৎ ‘সন্দেশ’ থেকেই ভূমিষ্ঠ হল শব্দটি ‘সংবাদ’। এমনি করেই সন্দেশ থেকে হলো সংবাদ, সংবাদ লেখালেখি থেকে হলো সংবাদপত্র, আর সংবাদপত্র এখন উড়ে উঠে গেল আকাশে, হয়ে গেলো তা অনলাইন। খুন খারাবি, লুটপাট, ধর্ষণ, হানাহানি, লিটফেস্ট, ফোকফেস্ট চলছে অফলাইন।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য তত্ত্বাবধান ও উদারীকরণের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, ডব্লিউটিও’র চুক্তিসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম চুক্তি হচ্ছে ‘বাণিজ্য-সম্পর্কিত মেধা-স্বত্ব অধিকার চুক্তি’ বা ট্রিপস, ট্রেড রিলেটেড আসপেক্টস অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস। ১৯৯৪ ইং সালে এক বৈঠকে ডব্লিউটিও’ ভুক্ত ১৫৫ টি দেশ মধ্যে ঐকমত প্রতিষ্ঠিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যেকটি দেশ তার ভূখণ্ডে উৎপাদিত পণ্য, বস্তু ও জ্ঞান-এর উপর মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য ‘ভৌগোলিক নির্দেশক’ জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন, সংক্ষেপে জি,আই আইন দ্বারা তা নিবন্ধনের জন্য অধিকার প্রাপ্ত। এই আইন দ্বারা নিজ দেশের পণ্য’কে আন্তর্জাতিক ভাবে নির্দিষ্ট এবং সুরক্ষার বিষয়টিতে দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশে ভেবেছে তা গুরুত্বহীণ। মেধা-স্বত্ব-বিষয়ক বৈশ্বিক সংস্থা, ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশে এই নিবন্ধন প্রদানের ক্ষমতা প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে- শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘ডিপার্টমেন্ট অব পেটেন্টস ডিজাইনস অ্যান্ড ট্রেডমার্কস’, ডিপিডিটি অধিদপ্তর। অবশেষে ঘুম ভাঙ্গে সরকারের।
২০১৩ ইং সালে বাংলাদেশ সরকার ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইনটি গ্যাজেট ভুক্ত করে এবং ২০১৫ সালে এর বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। সেই মোতাবেক চলতি বছর ২০১৬ইং ১৭ নভেম্বর, একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয়। দেশের সর্বপ্রথম ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি পায় বাংলার ইতিহাস খ্যাত ‘জামদানি’। খুব শীঘ্রই ‘ইলিশ’কে এই স্বীকৃতি দেয়া হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ডিপিডিটির তথ্য মতে, বাংলাদেশে এ রকম আরও দেড় শতাধিক পণ্য রয়েছে, যার অন্যতম হচ্ছে কুমিল্লার রসমালাই, বগুড়ার দই, মুক্তাগাছার মণ্ডা, রাজশাহীর সিল্ক, সুগন্ধি চাল কালিজিরা, কাটারী-ভোগ, চট্টগ্রামের শুঁটকি, টাঙ্গাইলের তাঁত, মনিপুরের শাল ও কুমিল্লার খাদি ইত্যাদি। এই সব পণ্যের স্বীকৃতি হয়তো মিলবেই দ্রুত, কিন্তু ততদিন পর্যন্ত আমাদের পণ্য আমাদের অধিকারে থাকবে কিনা- তা বলতে পারছি না। অবশ্য হারিয়ে গেলে মামলা মোকদ্দমা করে তা পুনরুদ্ধারের পথও খোলা আছে। কিন্তু কী আপনি হারিয়ে ফেলেছেন, কোথায় তা কখন, সেটা আপনারই ছিল কিনা, সেটাও তো জানতে হবে, তাই না?
পার্শ্ব রাষ্ট্র ভারত ১৯৯৯ ইং সালে এই আইনটি পাস করে। ২০০৪ইং সালে ‘দার্জিলিং টি’ নামে তাদের প্রথমটি পণ্যটি নিবন্ধিত হয়। এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭২টি পণ্যর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ। আমাদের দেশের বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক পণ্যর নাম ইতোমধ্যেই নিবন্ধিত করে ফেলেছে ভারত। প্রাচীন অর্থ-শাস্ত্রবিদ কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্র বইতে ঢাকাই মসলিন ও জামদানির কথা উল্লেখ করেছেন, সেটি প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ বছর আগের কথা। ১৪ শতকের বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতাও বলেছেন সোনারগাঁয়ের ‘জামদানি’র কথা। ভারতে ‘জামদানি শাড়ি’ নিবন্ধিত হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের ‘উপাধ্যা জামদানি শাড়ি’ নামে। হিমসাগর, ফজলি আম, লক্ষ্মণভোগ, আমরা জানি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী আম। আন্তর্জাতিকভাবে এদের অরিজিন এখন ভারত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে। এই তিনটি নামই ভারতে নিবন্ধিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পণ্য হিসাবে। দেখুন -ভারতের নিবন্ধিত পণ্য সমূহ।
এক হতে পারে আমাদের ইতিহাস নেই। আরেক হতে পারে ইতিহাস আমাদের থাকলেও আমরা ইতিহাস নিজেদের মতো লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, যদি প্রয়োজন পড়ে আমরা না হয় নতুন করে লিখে নেব, এনি প্রব্লেম? নো পোব্লেম এট অল! যেহেতু এটি আন্তর্জাতিক ‘প্রব্লেম’ তাই সম্ভবত এই পরিশ্রমটুকুও আমাদের করার কোন প্রয়োজন নেই, কেননা আমাদের ইতিহাস লেখা হয়ে গেছে, জাস্ট স্ক্যান, তারপর পিডিএফ, তারপর আপলোড মেরে দেন, বাস্! হয়ে গেলো! নিম্নে কপি পেস্ট করলাম সেই ইতিহাস-
উইকিপিডিয়া ইংরেজি সংস্করণ বলছে “Ras Malai” ভারত উপমহাদেশের একটি মিষ্টান্ন, যার অরিজিন মূলত বেঙ্গল। “A rich cheesecake without a crust” অর্থাৎ অতি উৎকৃষ্ট মোলায়েম ছানার কেক। বলা হয়েছে, কোলকাতার বিখ্যাত সুইট সপ ‘কে সি দাস গ্র্যান্ডসন্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণ চন্দ্র দাস এটি প্রথম সূচনা করেন। ‘Krishna Chandra’s major contribution was the introduction of the canned “Rossogolla” and the creation of “Rossomalai” in the year 1930। মাইকেল ক্রোন্ড নামীয় একজন সুইট বিশারদ তার “হিস্ট্রি অব ডেসার্ট” বইয়ে উল্লেখ করেছেন- The Das family of the famous K.C.Das Confectionery empire claims “Rossomalai” as a family invention, this time attributing its creation to Krishna Chandra Das, the second generation owner after whom the company is named.
অথচ প্রকৃত ইতিহাস বলছে অন্য এক গল্প! কুমিল্লা একদা ছিল ভারতের বর্তমান রাজ্য ত্রিপুরার অংশ, বর্তমান নোয়াখালীও তখন কুমিল্লার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৭৩৩ইং সালে বাংলার নবাব সুজাউদ্দিন ত্রিপুরাকে সুবে বাংলার অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৭৬৫ ইং সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দখল নিয়ে নেয় কুমিল্লার। ১৭৮১ইং সালে নোয়াখালীকে কুমিল্লা থেকে পৃথক করা হয়। দেশ ভাগের পর ১৯৬০ ইং সালে ত্রিপুরা জেলার নামকরণ করা হয় কুমিল্লা।
ত্রিপুরা রাজ্যে, রসগোল্লা ততদিনে মিষ্টির রাজা হিসাবে ব্যাপক আকারে জনপ্রিয়। অনবরত নেড়ে নেড়ে, দুধ জ্বাল দিয়ে গেলে একসময় তা ঘন হয়ে বাদামী রং ধারণ করবে, যার নাম মূলত ক্ষীরের রসা, ঘোষ সম্প্রদায়ের সেটা জানা আছে। কিন্তু এইবার ঘোষ সম্প্রদায় নানাবিধ রিসার্চ এন্ড ডেভালাপমেন্ট পূর্বক সিদ্ধান্ত নিলেন, রসগোল্লা কে আকারে একটু ছোট ছোট করে মার্বেল সাইজ বানিয়ে সেই রসগুল্লি ক্ষীরের ডুবিয়ে দিলে, দেখি না কী হয়! ক্ষীর এবং রসগুল্লির এই কম্বিনেশন-এর নাম দিলেন তারা ‘ক্ষীর ভোগ’। এই ‘ক্ষীর ভোগ’ তুমুল জনপ্রিয়তা পেলো। যেহেতু রসগোল্লার দৃষ্টিনন্দন দানা গুনো ক্ষীর বা মালাই মধ্যে ডুব ডুবে, ডুব সাঁতার কাটে, তাই ‘ক্ষীর ভোগ’ নামটি টিকে থাকলো না বেশিদিন। প্রচলিত হয়ে গেলো একটি নতুন নাম। সেটি ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের মিষ্টির ইতিহাসে’র এক নতুন অধ্যায়। অনন্য অপূর্ব, স্বর্গীয় স্বাদের সেই মিষ্টি’টির নাম হয়ে গেলো ‘রস মালাই’।
কুমিল্লাস্থিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া খড়িয়ালার সন্তান, খনিন্দ্র সেন ও মণিন্দ্র সেন নামীয় দুই ভাই। তারা জীবিকা অন্বেষণে পদার্পণ করলেন কুমিল্লা শহরে। কুমিল্লার কেন্দ্রস্থল মনোহরপুর এলাকায় বিখ্যাত রাজ রাজ্যেশ্বরী কালী মন্দিরটির অবস্থান। সেখানেই তারা একটি মিষ্টির দোকান খুলে বসলেন। তখন ব্রিটিশ শাসনামল, পাকিস্তান ভারত দেশ বিভাজনের ১৭ বছর আগের কথা।
১৯৩০ইং সাল। দোকানের নাম দিলেন – “মাতৃ ভাণ্ডার”। সকালের নাস্তার সাথে হরেক রকম মিষ্টি। এই দোকান থেকেই সর্বপ্রথম রসমালাই’র অফিসিয়াল বিপণন শুরু হলো। উইকিপিডিয়াতেও রসমালাই এর জন্ম সাল ১৯৩০ লিপিবদ্ধ করা আছে।
মনিন্দ্র সেন কৃতদার ছিলেন। আর খনিন্দ্র সেনের ছিল দুই মেয়ে এক ছেলে, তাঁর বড় ছেলের নাম ছিল শংকর সেনগুপ্ত। দেশ ভাগের আগেই ১৯৪০ ইং সালে পিতার অবর্তমানে দোকানের হাল ধরলেন শংকর সেনগুপ্ত। ব্রিটিশ আমলের পর ত্রিপুরা অন্তর্ভুক্ত হল ভারতশাসন অধীন, ১৯৪৭ইং সালে দেশভাগে কুমিল্লা হয়ে গেলো পূর্ব পাকিস্তান অধীন, তার পর ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পর অভ্যুদয় হলো নতুন দেশ। একদিন ব্রিটিশরা নবাব সিরাজের কথা রাখেনি, ব্রিটিশদের কথা কিন্তু রেখেছিলো মীরজাফর, বঙ্গবাসীরা সে সব ভুলে গেলেন। দেশভাগ করে নেতারা মাখনটা খেয়ে নিলেন, শুধু ঘোলটা রেখে দিলেন। সেই ঘোলে মানুষে মানুষে এতদিন জাত ছিল দুই, শুধু গরীব আর শুধু ধনী। নির্দিষ্ট হল নতুন দুই জাত, একটি তার হিন্দু অন্যটি হল মোসলমান। দেশ স্বাধীনের আগে ও পরে ভাই খুন করলো ভাইকে, আর পিতাকে খুন করলো তার সন্তান।
তেত্রিশ বছর প্রতীক্ষায় ছিলেন সুনীল, কেউ কথা রাখেনি। এখন ২০১৬ ইং সাল, ছিয়াশি বছর চলছে, সেই আদি গন্ধ ও স্বাদ, কথা রেখে গেলো শুধু মাতৃভাণ্ডার ও তার রসমালাই।
বানানোর কৌশল খুবই সহজ। ঘনত্বভেদ ৪০ লিটার দুধ থেকে প্রায় ১৪ কেজি’র মতো মালাই উৎপাদিত হয়ে থাকে। কিচেন উনুনে বিশাল বিশাল কড়াই, তাতে দুধ জ্বাল চলছে। অনবরত যারা নেড়েই চলছেন, কারিগর না হয়ে, তারা শিক্ষানবিস হলেও কিছু যায় আসে না। কেননা বিহাইন্ড দ্য কিচেন তত্ত্বাবধানে আছে লিজেন্ড কারিগর উত্তম দে সাথে খিতিশ সহ অন্যান্যরা। আনুমানিক দুই আড়াই ঘণ্টা জ্বাল দেয়ার পর প্রতি কড়াইয়ের দুধ রূপান্তরিত হচ্ছে মালাই বা ক্ষীরে। প্রচলিত মিষ্টি যে উপায়ে প্রস্তুত করা হয় সেভাবেই ছানা’র সাথে ময়দা’র খামির মিলিয়ে বানানো হয় ছোট ছোট দানা। চিনি সহযোগে পানিতে ফুটছে, তৈরি হয়ে যাচ্ছে ছোট ছোট রসগুল্লি। ২০ লিটার দুধ থেকে প্রায় ৭ কেজি পরিমাণ রস দানা পাওয়া যায়। এখন রসদানা তুলে এনে মালাইতে মিশিয়ে দিন, আপনার রসমালাই রেডি। রসমালাই তৈরির প্রধান উপকরণ যে দুধ, তা সংগ্রহের জন্য জেলাস্থিত কিছু অঞ্চলকে নির্দিষ্ট করা আছে। যেখানে গরুর প্রধান খাদ্য মূলত ঘাস জাতীয় খাবার, গরুর দুধ হতে হবে ঘন ও ননীযুক্ত।
শংকর সেনগুপ্ত’র বার্ধক্য জনিত কারণে এখন অসুস্থ। সন্তান অনির্বাণ সেনগুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র, ব্যবসার এখন একমাত্র উত্তরাধিকারী। বাবু রাখাল চন্দ্র দে, তত্ত্বাবধায়ক, তিনি রেগুলার দোকানে বসেন, দীর্ঘ দিন ধরে আছেন। শংকর সেনগুপ্ত মূলত একজন স্বল্প ভাষী মানুষ। প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত কথা বলতে স্বাছন্দ্য বোধ করেন না। মাতৃভান্ডার কেমন করে হল, আপনার রসমালাই কেন ভালো বাকিদেরটা কেন ভালো নয়, শহরের বাইরে অনেকে মাতৃভান্ডার নামে বিক্রি করছে, এটা কী ঠিক? এই জাতীয় খাজুরে গল্পে তিনি নিতান্তই অনাগ্রহী। সাংবাদিক, টিভি ক্যামেরা, নেতা, এমপি, মিনিস্টার রথী কিংবা মহারথী, হি ট্রিটস অল এজ ইক্যুয়েল। যে ইতিহাস কুমিল্লার মানুষের মুখে মুখে ফেরে, সমগ্র দেশ এমনকি বহির্বিশ্বেও অনেকেই, যে ইতিহাস কম বেশী জানে- সেই ইতিহাস তিনি চান না বলতে। এই ইতিহাস অল্প স্বল্প নয়, সুদীর্ঘ এক পথ পরিক্রমার গল্প।
মাতৃভাণ্ডার, একজন গ্রাহককে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন কেজি, তার বেশি অনুমোদন দেন না। কেননা দীর্ঘ লাইন লেগে থাকে সব সময়। এই ব্যাপারে মাতৃভাণ্ডার বড়ই নির্মম। দোকানের মালিক, ব্যবস্থাপক, স্টাফ- শহরবাসীর কাছে তাই জনপ্রিয় নন। যারা কুমিল্লার নন, দ্যাট ক্রেজি পিপল আর রেডি টু পারচেজ ইভেন ইন ডবোল অর রি ডবোল প্রাইস, সেটা তারা বেকুবের মতো অফারও করে বসেন, পার কেজি কত চাই বলেন? ঈদ পূজো পার্বণে দুধের দাম অনেক সময় দ্বিগুণ পর্যন্ত হয়ে যায়, রসমালাই’র দাম বাড়ে না। দিনের একটি বিশেষ সময়ের পরে রসমালাই আর পাওয়াও যায় না। বেচা বিক্রি নিয়ে হই চই জটলা লেগেই আছে! মাতৃভান্ডার পরিবারে এই নিয়ে কোন অস্থিরতা কিংবা উচ্ছ্বাস কোনটাই নেই, যাবতীয় অস্থিরতা শুধু ক্রেতা পক্ষের। মালিক পক্ষ চাইলে, কুমিল্লা শহরেই মাতৃভান্ডারের বেশ কয়েকটি শাখা খুলতে পারতেন, কিন্তু এই বিষয়ে কোন আগ্রহ নেই তাদের।
চব্বিশ ঘণ্টা চলে গেলেই, আজ দিনটি গতকাল, গতকালের ডানায় চেপে মাতৃভান্ডার পরিভ্রমণ করে আরও একটি আগামীকালের পথে। আপনি যখন মাতৃভান্ডারের রসমালাই কেনেন, শুধুই রসমালাই নয়, আপনি বর্তমানের মোড়কে একটি ইতিহাস নিয়ে বাড়ি ফেরেন আসলে।
কুমিল্লা মনোহরপুরে রাজ রাজ্যেশ্বরী কালী মন্দির সামনে মাতৃভাণ্ডার ছাড়াও আরও দুইটি ঐতিহাসিক মিষ্টির দোকান অবস্থিত। পত্র পত্রিকায় তেমনটা উল্লেখিত হয়নি বলে শহরবাসী ছাড়া বাকীরা সেটা খুব একটা জানেন না। একটি শীতল ভান্ডার একটি পেড়া ভান্ডার। এই দুই দোকানের রসমালাইও গুনে ও মানে মাতৃভান্ডারের কাছাকাছি। কুমিল্লার রসমালাই বলতে মূলত এই তিনটি দোকানেরই রসমালাই কে বোঝানো হয়। এই তিন দোকানের অন্যান্য মিষ্টি যেমন মালাইকারী, পেড়া, রসগোল্লা, কালোজাম, ক্ষীর ইত্যাদি খুবই মানসম্পন্ন, নিঃসন্দেহ তা দেশ সেরা।
কুমিল্লায় আরও একটি বিখ্যাত দোকানের নাম উল্লেখ করা এখানে আবশ্যিক, তার নাম হচ্ছে ‘জলযোগ’। কারো কারো মতে এটি কুমিল্লার প্রাচীনতম মিষ্টির দোকান। সাম্প্রতিক সময়ে এই দোকানের একটি বিশেষ রসগোল্লা শহরে জুড়ে তুমুল জনপ্রিয়। নাম ‘স্পঞ্জ রসগোল্লা’, এর বিশেষত্ব এর নামেই, মুখে দিলেই তা মুহূর্তে হাওয়া। টানা দশটি খাবেন মনে হবে মাত্র একটি খেয়েছেন। এই দোকানের স্পঞ্জ রসগোল্লাকে কুমিল্লাবাসী বিশ্বের সেরা স্পঞ্জ হিসাবে বিবেচনা করে থাকে। আপনারা যারা ঢাকা শহরবাসী ১০০০ টাকা কেজি মূল্যে এক্সট্রা সুপার ক্লাসিক প্রিমিয়াম মিষ্টি খেয়ে গভীর তৃপ্তিতে আহা উহা করেন, আপনাদের এই সুখ প্রকাশে, কুমিল্লাবাসী গভীর শোক প্রকাশ করছে।
|
Quote:
কুমিল্লা মূল ‘মাতৃ ভাণ্ডার’ শহরের যেখানে অবস্থিত সেখান থেকে কুমিল্লা বিশ্বরোড বা মহাসড়কের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার, যা প্রায় এক ঘণ্টার পথ। অথচ চান্দিনার আগে থেকে শুরু করে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত, পুরো হাইওয়েতে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পথ জুড়ে সত্তরটিরও বেশি দোকানের অবস্থান। নামে এরা সবাই ‘মাতৃ ভাণ্ডার’। ‘ময়নামতি মাতৃ ভাণ্ডার’, ‘কুমিল্লা মাতৃ ভাণ্ডার’, ‘অরিজিনাল মাতৃ ভাণ্ডার’, ‘নিউ মাতৃ ভাণ্ডার’, ‘বিশ্বরোড মাতৃ ভাণ্ডার’, ‘১নং মাতৃ ভাণ্ডার’, ‘মাতৃ ও ভাণ্ডার’, ‘আসল মাতৃ ভান্ডার’, ‘খাঁটি মাতৃ ভান্ডার’, ‘ওল্ড মাতৃ ভান্ডার’, ‘১০০% মাতৃ ভান্ডার’, ‘মনোহরপুর মাতৃ ভান্ডার’, ‘আদি মাতৃ ভান্ডার’, ‘মাতৃভান্ডার লিঃ’ এই রকম অসংখ্য নাম। তার মধ্যে হাইওয়ের নামীদামী হোটেলগুলোতে যেখানে বাস সাময়িক যাত্রা বিরতি দেয়, সেখানেও বিক্রি হচ্ছে মাতৃ ভাণ্ডার রসমালাই। বাংলাদেশে প্রবাসীদের দেশে পাঠানো বড় রেমিট্যান্স অংশটি, মূলত নোয়াখালী কুমিল্লা সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। কুমিল্লা নোয়াখালী’র এই সব মাথার ঘাম পায়ে ফেলা পরিশ্রমী মানুষগুলো সৌদি কিংবা এমিরেটস-এ চেপে যখন এয়ারপোর্টে নামেন প্রথম মুর্গাটি হন- বাড়ি ফেরার মাইক্রোবাস ঠিক করার সময়, আর দ্বিতীয়বার মুর্গাটি হন- মহাসড়ক থেকে কেজি দশ রসমালাই কেনার সময়।
একটি মিষ্টির দোকানের এতো গুলো ফেক ব্রাঞ্চ, বিশ্বের আর কোথাও নেই, এটি অসম্ভব ব্যাপার, এটি একটি বিশ্ব রেকর্ড!
পুলিশ ও প্রশাসন আগেও বলেছেন, আজও বলবেন, জানতে যদি চাই।
-মাতৃভান্ডারের এতো গুলো দোকান, কারা এর মালিক, শংকর বাবু?
-হে হে হে, আপনি মনে হয় মংগল গ্রহে থাকেন!
-না আমি অফিসিয়ালি জানতে চাইছি।
-অর্জিনাল মালিক শংকর বাবুর কোন অভিযোগ নাই, তাইলে আমাদের কী করার আছে?
-কিন্তু মানুষ তো প্রতিদিন প্রতারিত হচ্ছে!
-এখানে প্রতারণার কিছু নেই, বলতে পারেন চুলকানি বেশি, বলদ গুলান ভুয়া জেনেই কেনে।
-আমরা কী এর কোন প্রতিকার আশা করতে পারি?
-না পারেন না, কেননা এই দোকান গুলোর একটিও ‘মাতৃ ভাণ্ডার’ নয়।
-তাহলে বছরের পর বছর এমনটাই চলবে?
-না এমনটা চলবে না, শংকর বাবুকে লিখিত অভিযোগ করতে বলেন।
-কিন্তু ভোক্তা অধিকার আইনে, যে কেউ চাইলে অভিযোগ করতে পারেন।
-আপনে করেন, আমরা একশানে যাবো।
-না করলে একশানে যাবেন না?
-ভাই, শহরে এই নামে কোন দোকান অনুমোদন দেই নাই, দিস ইজ নট কুমিল্লা, দিস ইজ বিশ্ব রোড।
-প্রশাসন, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
-আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই।
|
Quote:
[ভারত জিআই আইন দ্বারা পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত তিন প্রকারের মিষ্টি ‘জয়নগরের মোয়া’, ‘সীতাভোগ’ ও ‘মিহিদানা’ কে ইতোমধ্যেই নিবন্ধন করে ফেলেছে। ১৯২৯ সালে পল্লীকবি জসীম উদ্দীন রচনা করেছিলেন‘ নকশী কাঁথার মাঠ’- যা বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য আখ্যান-কাব্য। যদিও তা বাংলার ঐতিহ্যবাহী নকশী কাঁথা সম্পর্কিত নয়, কিন্তু এই সাহিত্য নির্দেশনা দেয়- ‘নকশী কাঁথা’ এই নামটি বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কযুক্ত। অথচ ভারত আমাদের নীরবতার সুযোগ নিয়ে ‘নকশী কাঁথা’ নামটিও নিবন্ধন করে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গর পণ্য হিসাবে।
উইকিপিডিয়াতে সুস্পষ্ট লেখা Nakshi kantha, a type of embroidered quilt, is a centuries-old Bengali art tradition in Bangladesh.The basic material used is thread and old cloth. Kanthas are made throughout Bangladesh, but the greater Mymensingh, Rajshahi, Faridpur and Jessore areas are most famous for this craft.
অতএব কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী ‘রসমালাই’ আমাদের পণ্য হিসাবে জিআই আইন দ্বারা অতি দ্রুত নিবন্ধিত হওয়াটা ভীষণ জরুরি। যারা ‘রসমালাই’ বানান, যারা খান, সাথে বাংলাদেশের বিশ কোটি আমজনতা, আসেন ভাই মাঠে নামেন, ঝাঁপায় পড়েন, বেহুদা প্যাঁচালের গুষ্ঠি ঠেঙ্গাই বাই। আসেন বরং সত্যি সত্যি উজ্জীবিত হই, হতাশার মধ্যেও এটি একটি নিদারুণ আশার ব্যাপার! ভারত, এই আইনটি পাশ করার পর, প্রথম পণ্যটি অনুমোদন দিয়েছে প্রায় ছয় বছর পর। সেখানে বাংলাদেশে ২০১৩ সালে আইনটি গ্যাজেটভুক্ত হয়ে ২০১৫ তে বিধিমালা প্রণয়ন এবং ২০১৬ তে নিবন্ধন, অর্থাৎ মাত্র তিন বছরের মধ্যে সরকার নিবন্ধনের কাজটি সুসম্পন্ন করেছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তাই কুমিল্লা জেলার চেম্বার অব কমার্স, বিসিক, মাননীয় মন্ত্রী, মাননীয় সাংসদ, সিটি কর্পোরেশন, রাজনৈতিক কর্মী, শিক্ষাবিদ, সচেতন নাগরিক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, সাথে জেলা প্রশাসন নিজ উদ্যোগে ব্রতী হয়ে কাজটি দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন, সেটাই আমাদের একমাত্র প্রত্যাশা। ‘রসমালাই’ -এর দ্রুত জিআই নিবন্ধন চাই।
|
http://blog.bdnews24.com/utpal3000/199528
__________________
আমার অপার সীমানাতে তোমার চিহ্ন তবু রবে বেঁচে ...
|
November 26, 2016, 05:21 PM
|
Cricket Sage
|
|
Join Date: May 18, 2005
Location: New England
Favorite Player: Mominul Haque
Posts: 24,706
|
|
So, say we do not register something with this GI or whatever. Does it or will it be able to change the history? Truth is out there and no matter how many formal registration happens, Chorjapod will still remain the first piece of Bengali literature and so are others.
__________________
À vaincre sans péril, on triomphe sans gloire.
|
December 25, 2016, 10:12 AM
|
|
Cricket Savant
|
|
Join Date: March 9, 2008
Location: Ω
Posts: 35,906
|
|
That guy with chacha apparently loves his mattryi bhandar a bit too much.
|
December 25, 2016, 10:14 AM
|
|
Cricket Savant
|
|
Join Date: March 9, 2008
Location: Ω
Posts: 35,906
|
|
chana murki choysho taka ek k.g.? jeezus man. :shock:
|
December 25, 2016, 10:16 AM
|
|
Cricket Savant
|
|
Join Date: March 9, 2008
Location: Ω
Posts: 35,906
|
|
Anyone knows why they give those patas over those chana or doi or kheer or whatever those are?
|
Currently Active Users Viewing This Thread: 1 (0 members and 1 guests)
|
|
Posting Rules
|
You may not post new threads
You may not post replies
You may not post attachments
You may not edit your posts
HTML code is On
|
|
|
All times are GMT -5. The time now is 11:53 AM.
|
|