From Kaler Kantha -
নির্বাচকদের রাডারে আছেন তাঁরাও
“ও আমাদের ‘প্ল্যান বি’তেও নেই”—প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের এমন কথায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা মিলিয়ে যাওয়ার মাত্র কিছুদিন আগেই অলক কাপালি ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন! গত বছর মে মাসে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত তিক ফার্স্ট ক্লাস আসর বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে নতুন করে নিজেকে মনে করিয়ে দেওয়া সেই ইনিংসটি খেলেছিলেন পূর্বাঞ্চলের এ ব্যাটসম্যান। তবু নির্বাচকদের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ অলক বছরের শেষে আবার ঝলক দেখিয়েছেন। তাঁর ব্যাটিংয়ে প্রথমবার খেলতে নেমেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) শিরোপা জেতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস।
হিসাবের খাতা থেকে ‘ইরেজার’ দিয়ে কারো নাম মুছে দেওয়ার পর যদি তিনি এমন পারফরম্যান্সের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন, তাহলে কেমন প্রতিক্রিয়া হয়? এ প্রশ্ন রেখে অবশ্য মুখ লুকানো কোনো প্রতিক্রিয়া নেই ফারুকের। তিনি বরং যুক্তি দিয়েই প্রতিষ্ঠিত করতে চান যে তাঁদের সিদ্ধান্ত সঠিকই ছিল, ‘আমরা অনেকেই নির্দিষ্ট একটি পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে উপসংহারে পৌঁছে যেতে চাই। বলে বসি যে ওকে এখনই সুযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু চিন্তা করে দেখি না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাহিদা মেটানোর মতো অবস্থায় ও কতটুকু আছে? ওই জায়গাটায় জাতীয় দলে কে খেলছে? আদৌ কারো দরকার ওই জায়গাটায় আছে কি না?’
অলকের ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রশ্নের নেতিবাচক উত্তরই পেয়েছেন প্রধান নির্বাচক, ‘ঘরোয়া আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাহিদা পুরোপুরি আলাদা। ঘরোয়া আসরে ফিটনেস খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়, আপনি রান করলেই যথেষ্ট। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনার শুধু রান করলেই হচ্ছে না। তা ছাড়া খেলবে কার জায়গায়? এই জায়গায় মাহমুদ উল্লাহ আছে। নাসির খেলারই সুযোগ পাচ্ছে না। সাব্বির আছে। এখনকার অলকের চেয়ে এরা সবাই ভালো খেলোয়াড়।’
কাজেই ধরে নেওয়া যায় যে অলকের জাতীয় দলে ফেরার কোনো সম্ভাবনাই আর অবশিষ্ট নেই। তবে তাঁর মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নানা সময়ে পারফর্ম করা একাধিক ক্রিকেটার আছেন, যাঁদের এখনো ফিরে আসার সম্ভাবনায় আস্থা আছে ফারুকের। সে আস্থা প্রকাশেও তিনি অলককে বাতিল করে দেওয়ার মতো করে দ্বিধাহীন। কারা তাঁরা? একে একে সে নামগুলোই জেনে নেওয়া যাক।
২০০৬ সালের এপ্রিলে ফতুল্লায় শেন ওয়ার্ন ও স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের মতো লেগস্পিনারদের ঠেঙিয়ে ১৩৮ রানের দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলা শাহরিয়ার নাফীস আছেন ফারুকের তালিকার শুরুতেই, ‘আমার বিশ্বাস টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশকে দেওয়ার মতো কিছু এখনো শাহরিয়ার নাফীসের মধ্যে অবশিষ্ট আছে। একেই ভালো ক্রিকেট মস্তিষ্ক ওর। তা ছাড়া এখন বেশ অভিজ্ঞও হয়ে গেছে। দুয়ে মিলে ও ফিরলে ভালোই করবে।’
নাফীসের কালোত্তীর্ণ সেই ইনিংসের প্রায় এক দশক পর গত বছর জুনে সেই ফতুল্লায়ই ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত লিটন কুমার দাশও দল থেকে ছিটকে পড়েছেন। ৩ টেস্ট এবং ৯ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে খুব উল্লেখযোগ্য কিছু করতে না পারলেও তাঁর মাঝে দেখা যাওয়া ব্যাপক সম্ভাবনাটা মুছে যায়নি। যায়নি বলেই ফারুক নিশ্চিত, ‘আমি বিশ্বাস করি লিটন দলে ফিরবেই। যখন জানি যে ওর সামর্থ্য আছে অসাধারণ কিছু করার।’
১০ বছর আগে-পরের নাফীস-লিটনের সঙ্গে আরো দুজনও আছেন ফারুকের তালিকায়, যাঁরা মাঝের সময়টিতে জাতীয় দলে এসে কিছুদিন খেলেছেন। অল্পবিস্তর সাফল্য আছে তাঁদেরও। তুলনায় ব্যর্থতার পাল্লা ভারী হওয়ায় ছিটকেও পড়েছেন। এখন তো নির্বাচকদের জাতীয় দল ভাবনায় এঁদের নাম সেভাবে উচ্চারিতও হয় না। মুখে না থাকলেও মনে যে তাঁরা আছেন, সেটি ফারুকের মুখ থেকে উচ্চারিত দুটো নাম খুব ভালো বুঝিয়ে দিচ্ছে। একজন হলেন, ‘জুনায়েদ সিদ্দীক। ও নিজেও স্বীকার করবে ফিটনেস নিয়ে যে পরিশ্রমটা করার দরকার ছিল, সেটি সে করেনি। এখন শুনছি খুব খাটছে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এখনো ওর খুব ভালো সম্ভাবনা আছে।’ আরেকজন, ‘রকিবুল হাসান। খুব ভালো টেস্ট ব্যাটসম্যান হতে পারত। ওর সেই সামর্থ্য আছেও। দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচে ট্রিপল সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান। কিন্তু ওকে সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় খেলানো হয়নি। ওকে আমরা টি-টোয়েন্টিও খেলতে দেখেছি, যে ফরম্যাটের সঙ্গে সে একদমই যায় না।’
অলক না গেলেও নির্বাচকদের ভাবনার সঙ্গে এ চারজনই খুব যাচ্ছেন, ‘এই কয়েকটি ছেলে যদি নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে জাতীয় দলে ফিরতে পারে আমার খুব ভালো লাগবে।’