মূল পাতা খেলা
¦ [print]
« পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী সংবাদ »
সাইকেলে চড়ে বাংলাদেশ ড্রেসিংরুমে! মাসুদ পারভেজ, খুলনা থেকে
সাইকেলে চেপে শুরু করা যাত্রায় অবশেষে সেই গন্তব্যের দেখা পেলেন মমিনুল হক, যেখানে পৌঁছানোর স্বপ্ন থাকে যেকোনো ক্রিকেটারেরই। অনেক দিন চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকা এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ঢুকে গেলেন জাতীয় দলে।
সেটা তাঁর ব্যাটের সৌরভে সবাইকে সুরভিত করেই। এখানে বলে রাখা ভালো যে মমিনুলের ডাকনামও 'সৌরভ'। এমনিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডের দলে তাঁর জায়গা পাওয়ারই কথা ছিল না। কিন্তু ইনজুরির কারণে সাকিব আল হাসান ছিটকে যাওয়ায় সুযোগটা চলে এলো। টিম ম্যানেজমেন্ট একজন খাঁটি ব্যাটসম্যানই দলে চাইছিল; কিন্তু অলরাউন্ডার নেওয়ার চিন্তায় নির্বাচকরা কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন। তবে প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের হয়ে জাতীয় দল এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পরপর দুই দিনে ৪৫ ও ৪৩ রানের দুটো ইনিংসে ফয়সালাটা তাঁর পক্ষেই যায়।
সিদ্ধান্তটা নিতে কতখানি বিলম্ব হয়েছে, সেটিই বোঝাতে কাল বিকেলে প্রধান নির্বাচক আকরাম খান তাঁর মোবাইল ফোনের একটি খুঁদে বার্তা খুলে দেখান, '৩টা ৪৬ মিনিটে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর মমিনুল আউট হয়েছে ৩টা ৪৫ মিনিটে।' এ সুযোগটা ধারাবাহিকতার পুরস্কার হিসেবেই পেয়েছেন বলে জানালেন আকরাম, 'এক-দেড় বছর ধরে ও খুব ভালো ব্যাট করে আসছে। জাতীয় দলের বাইরের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যারা ফর্মে আছে, তাদের মধ্যে ধারাবাহিকতায় মমিনুলই সবচেয়ে এগিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ হাইপারফরম্যান্স দলের বিপক্ষে ভালো ইনিংস আছে। এবারের জাতীয় লিগেও আছে দুটো সেঞ্চুরি।'
এ সবকিছুরই যোগফলে জাতীয় দলের স্বপ্নপূরণ। সাইকেল চালিয়েই যে স্বপ্ন ধরার জন্য চলতে শুরু করেছিলেন মমিনুল। ২০০৪ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হন। কিন্তু এর আগের বছর জানলেন ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার যোগ্যতাই নাকি তাঁর নেই। সে জন্য উচ্চতা হতে হবে অন্তত পাঁচ ফুট। কিন্তু মমিনুল তখন মেরে-কেটে চার ফুট আট কী নয়! সাইকেল চালালে লম্বা হওয়া যাবে! কারো কাছ থেকে এমনটা জেনেই বাবাকে সাইকেল কিনে দেওয়ার আবদার করে বসলেন। বাবাও কিনে দিলেন। এরপর আর যান কোথায়! লম্বা হওয়ার জন্য কক্সবাজার শহরে ধুমসে সাইকেল চালাতে লাগলেন!
এর ফলাফলটা শুনুন মমিনুলের নিজের মুখ থেকেই, 'সাইকেল চালানোটা খুব কাজে দিয়েছিল। আমি বিকেএসপিতে পাঁচ ফুট হয়েই ঢুকেছিলাম।' অথচ ক্রিকেট খেলার জন্য সেই কৈশোরে মায়ের কত মারই না হজম করেছেন। আর এখন সেই ক্রিকেট দিয়েই মমতাময়ী মা মালেকা জয়নাবের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্য এ তরুণের। এখানে এসেই আর দশজন ক্রিকেটারের চেয়ে মমিনুলের গল্পটা একটু অন্যদিকে মোড় নিয়ে নিচ্ছে। বছরখানেক হয় মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে তাঁর মা শয্যাশায়ী। কাল সন্ধ্যায় মায়ের বর্তমান অবস্থা জানাতে গিয়ে কণ্ঠটা ধরে আসে মমিনুলের, 'অন্যের কথা বোঝেন; কিন্তু নিজে কোনো কথা বলতে পারেন না।'
তবে ক্রিকেটে ছেলের যেকোনো সাফল্যের খবরে মুখের কোণে ফুটে ওঠা হালকা হাসির রেখাই মমিনুলের জন্য এখন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দৃশ্য, 'আমি নিজে ফোনে তাঁকে খবরটা দিতে পারলে কী যে খুশি হতেন। কিন্তু উনি তো কথা বলেন না। তাই ফোন দিইনি। তবে জানি তাঁর মনে এতক্ষণে খুশির জোয়ারই বয়ে যাচ্ছে। জাতীয় দলের হয়ে ভালো খেললে আরো বেশি খুশি হবেন নিশ্চয়ই। খেলার সুযোগ পেলে তাই আমি আমার মায়ের জন্যই খেলব।' ভেতরে ভেতরে এমন পণ করে রাখা মমিনুলের কথায় অবশ্য কাল বিকেলেও জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার উচ্ছ্বাস ধরা কঠিন ছিল। বিসিবি একাদশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রস্তুতি ম্যাচ শেষ হওয়ার পর পরই সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজেকে একরকম নিরাবেগ বলেই মনে করিয়ে গেছেন কেবল!
অবশ্য এমন আবেগহীন তিনি তাঁর শহরের গৌরব নিয়েও। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজার তাঁর ঠিকানা। অথচ সমুদ্র নাকি তাঁকে টানেও না, 'আপনারা হয়তো মনে করেন যে কক্সবাজার গেলেই আমি সমুদ্রে ঝাঁপাতে যাই। আসলে মোটেও সে রকম কিছু নয়। সমুদ্র আমাকে টানেই না। এই জীবনে বড়জোর চার-পাঁচবার হয়তো সমুদ্রে গোসল করেছি।' সমুদ্র টানেনি; কিন্তু ক্রিকেট টেনেছে। এরই টানে ছুটে চলা মমিনুল জাতীয় দলে ঢোকার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গিয়ে শব্দ খরচে বড়ই কৃপণ। দু-এক কথায় জবাব শেষ। তাঁকে একটুও 'এক্সাইটেড' না দেখানোর কারণ ব্যাখ্যায় একবার বললেন, 'একেকজনের স্বপ্ন থাকে একেক রকম। আমার হয়তো আরো বড় স্বপ্ন আছে।' আরো বড় স্বপ্নের কথা কিছুতেই বলতে না চাওয়া মমিনুল এও শোনালেন, 'আমি অত উচ্ছ্বসিত হই না। হলে হয়তো অহংকার বা গর্ব চলে আসতে পারে।'
সেই বড় স্বপ্নটা কি তাঁর শহরের আরেকটি 'গৌরব' হওয়ার? হলেও হতে পারে। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে সেই স্বপ্নের পথে যাত্রার শুরুটাও কিন্তু সাইকেল চালিয়েই হয়েছে!
Last edited by shuziburo; November 29, 2012 at 09:48 AM..
Reason: Added Bangla tag for better readability
|