View Single Post
  #3810  
Old December 22, 2011, 12:48 AM
idrinkh2O's Avatar
idrinkh2O idrinkh2O is offline
Test Cricketer
 
Join Date: April 9, 2011
Favorite Player: Performing Tigers
Posts: 1,879

মুশফিকের ওই শটেই আশার সমাধি
উৎপল শুভ্র | তারিখ: ২২-১২-২০১১

ঢাকায় প্রথম ওয়ানডেতে গ্যালারিতে চাঁদ-তারা খচিত পতাকার ওড়াউড়ি অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগিয়েছিল—খেলাটা ঢাকায় হচ্ছে, না করাচিতে! খেলা আর রাজনীতি না মেশানোই ভালো। তার পরও বিজয়ের মাসে লাল-সবুজের পাশে চাঁদ-তারার আন্দোলন চোখে লেগেছিল বলে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে স্টেডিয়ামের গেটেই সেসব বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়।

সিরিজের শেষ দিনে ঢাকা যেন আবার করাচি হয়ে গেল! আরও নির্দিষ্ট করে বললে মিরপুর শেরেবাংলা হয়ে গেল করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়াম!

না, এখানে পতাকা-টতাকার ব্যাপার নেই। মিলটা টেস্টের পরিস্থিতিতে। পাকিস্তান অবশ্য এবার অন্য ভূমিকায়। এগারো বছর আগে ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে দিনের আলো মরে যাওয়ার জন্য প্রার্থনা করছিল পাকিস্তান দল। শুধু প্রার্থনাই নয়, ইংল্যান্ডকে ৪৪ ওভারে ১৭৬ রান করতে না দেওয়ার জন্য অধিনায়ক মঈন খানের নেতৃত্বে সময় নষ্ট করার যত রকম ছলচাতুরী করা সম্ভব, করেছিল তার সবও। দুই আম্পায়ার এবং ম্যাচ রেফারি তা বুঝতে পেরে প্রায়ান্ধকারেও খেলা চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে জিতে যায় ইংল্যান্ড। ৩৯ বছর পর পাকিস্তানে ইংল্যান্ডের প্রথম টেস্ট জয়ে ভেঙে যায় ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের টানা ৩৪ টেস্ট অপরাজিত থাকার রেকর্ড।

‘ধান ভানতে শিবের গীত’ মনে হচ্ছে? হতেই পারে। তবে আপনি যদি টেলিভিশনেও করাচির ওই টেস্ট দেখে থাকেন, কাল পাকিস্তানের ইনিংসের সময় মিলটা আপনারও মনে হওয়ার কথা। ফিল্ডাররা বল দেখতে পাচ্ছেন না দাবি করে করাচিতে মঈন খান বারবার আম্পায়ারদের কাছে খেলা বন্ধ করার আবেদন করছিলেন। এখানে ওসব আবেদন-নিবেদনের প্রশ্নই উঠছিল না। কারণ খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আলো যথেষ্ট কি না—এই সিদ্ধান্তের এখতিয়ার এখন শুধুই দুই আম্পায়ারের।

জয় থেকে পাকিস্তান যখন ২৩ রান দূরে, দুই আম্পায়ার একবার আলোচনাও করলেন। বাংলাদেশ দলকে হতাশ করে অনুমিতভাবেই সিদ্ধান্ত নিলেন খেলা চালিয়ে যাওয়ার। অনুমিতভাবেই, কারণ করাচিতে ফ্লাডলাইট ছিল না। এখানে ফ্লাডলাইট সগৌরবে জ্বলছে। আলোর স্বল্পতার অজুহাতে পাকিস্তানকে জয়বঞ্চিত করলে সেটির আন্তর্জাতিক কেলেঙ্কারিতে পরিণত হওয়াটাও নিশ্চিতই ছিল।

১০৩ রান করতে পাকিস্তান পেয়েছিল ৪০ ওভার। তবে সেটি কাগজে-কলমেই। প্রতিপক্ষ এখানে যত না বাংলাদেশের বোলিং, তার চেয়ে বেশি মরে যেতে থাকা আলো। শেষ পর্যন্ত দুটিকেই হারিয়ে পাকিস্তান জিতে গেল ২০.৫ ওভারেই। উইকেট হারাতে হলো ৩টি। যার একটি নতুন বলে শুরু করে এক প্রান্ত থেকে টানা বোলিং করে যাওয়া সাকিবের। তৃতীয় উইকেটটি পড়ল জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে। হয়তো জয়টা অন্তঃকলহে জর্জর দলকে এক সুতোয় গাঁথার নায়ক মিসবাহ-উল-হকের ব্যাটে আসা উচিত বলেই। দ্বিতীয় বলে ছক্কায় তা এনেও দিলেন মিসবাহ। এ বছর দশম টেস্টে ষষ্ঠ জয়। সাফল্যের হারে পাকিস্তানের ওপরে আছে শুধুই র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল ইংল্যান্ড।

পাকিস্তানের ইনিংসের বর্ণনায় এতটা জায়গা খরচ হয়ে গেল। অথচ এটাই শেষ দিনের সবচেয়ে অনুল্লেখযোগ্য অংশ। তা হলে উল্লেখযোগ্য কী? মুশফিকুর রহিম ও নাসির হোসেনের ষষ্ঠ উইকেট জুটি। মিরপুরে ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের জুটির নতুন রেকর্ডও হলো। তবে ১১৭ রানের ওই জুটি তৃপ্তির চেয়ে আক্ষেপও কম জাগাল না!

তৃপ্তির অংশটা আগে বলে নেওয়া যাক। ‘নিয়ম’ মেনে চললে ৫ উইকেটে ১১৪ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শেষ করা বাংলাদেশের পঞ্চম দিন লাঞ্চের মধ্যেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। নিয়মের কথা যদি বলেন, ততক্ষণে ম্যাচ শেষ হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল যথেষ্টই। অথচ লাঞ্চের সময়ও অবিচ্ছিন্ন মুশফিকুর-নাসির! ৬৮ রানের লিডে উল্টো টেস্টটা বাঁচিয়ে ফেলার আশা রীতিমতো জ্বলজ্বলে।

লাঞ্চের পর অবশ্য পরিচিত চেহারায় প্রত্যাবর্তন। নাসির যেভাবে খেলছিলেন, তাতে ওয়ানডের মতো প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিও উপহার দিয়ে এই সিরিজ তাঁর দুহাত ভরিয়ে দেবে বলেই মনে হচ্ছিল। রেহমানের সোজা বলে বোল্ড হয়ে সেই আশার মৃত্যু।

ড্রয়ের আশা এর পরও ছিল। শেষ চার উইকেটে আর বিশ-পঁচিশ ওভার ব্যাটিং করতে পারলেই হতো। অথচ শীতের ঝরাপাতার মতো টুপটাপ উইকেট পড়ে মাত্র ১২.৩ ওভারেই শেষ বাংলাদেশের ইনিংস। প্রথম ইনিংসে শেষ ৫ উইকেট পড়েছিল ৩৩ রানে। এবার আরও ১১ রান কমে!

আক্ষেপটা আরও বাড়ছে, অধিনায়ক স্বয়ং এই ধসের শুরু করে দিয়ে গেলেন বলে। মুশফিকুর রহিম অধিনায়ক হওয়ার পর তাঁর ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ বাবা মাহমুদ হামিদ দারুণ একটা কথা বলেছিলেন, ‘কাঁধটা ছোট, কিন্তু দায়িত্বটা অনেক বড়।’ সেই দায়িত্বজ্ঞানের কী পরিচয়টাই না দিলেন মুশফিকুর!
আবদুর রেহমানকে যেভাবে উড়িয়ে মারতে গেলেন, সেটির কী ব্যাখ্যা হতে পারে? শঙ্খ ঘোষের কবিতায় একটা লাইন আছে, ‘কোনো যে মানে নেই, এটাই মানে’। মিড অফে ক্যাচ হয়ে যাওয়া মুশফিকুরের ওই পাগুলে শট সম্পর্কেও একই কথা, ‘কোনো যে ব্যাখ্যা নেই, এটাই ব্যাখ্যা’।

প্রচণ্ড মানসিক চাপে কার কী প্রতিক্রিয়া হয়, বলা কঠিন। মুশফিকুরের ওই শটটিও হয়তো প্রচণ্ড চাপের পার্শ্বপ্রতিক্রি া। নইলে তাঁর মতো ঠান্ডা মাথার মানুষ কেন অমন হঠকারিতা দেখাতে যাবেন? সমস্যা হলো, অধিনায়ক অমন কিছু করে ফেললে তাঁর আর দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বশীল ব্যাটিং সম্পর্কে বক্তৃতা দেওয়ার অধিকার থাকে না।

পরাজয়ের অন্ধকারে আশার ঝলকানি খোঁজাটা বাংলাদেশের ক্রিকেট-সমর্থকদের নিয়তিই বলতে পারেন। এখানে তা খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে। ম্যাচের সর্বোচ্চ ইনিংস ও সেরা বোলিংয়ের পুরস্কার হিসেবে ম্যাচসেরা সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে সর্বোচ্চ চারবার ম্যাচসেরা হওয়ার রেকর্ড হয়ে গেল তাঁর। হয়ে গেল একটি বিশ্ব রেকর্ডও। সেই রেকর্ডটি আনন্দের না কষ্টের, সেটি অবশ্য একটা বড় প্রশ্ন।

এত দিন টেস্ট ক্রিকেটে পরাজিত দলের পক্ষে সর্বোচ্চ তিনবার ম্যাচসেরার স্বীকৃতি পাওয়ার রেকর্ড ছিল মোহাম্মদ আশরাফুল, শচীন টেন্ডুলকার ও ওয়াসিম আকরামের। সাকিবও যোগ হলেন এই দলে। নিশ্চিত থাকতে পারেন, রেকর্ডটি শুধু নিজের করে নিতে বেশি সময় নেবেন না সাকিব আল হাসান!
বাংলাদেশ: ৩৩৮ ও ২৩৪
পাকিস্তান: ৪৭০ ও ১০৭/৩
ফল: পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী
__________________
-- Alwayz with !!! Champions are made from something they have deep inside them - a desire, a dream, and a vision!
-- Bangladesh are the Runners-up in the 2012 ASIA Cup!
Reply With Quote