View Single Post
  #17  
Old September 3, 2009, 06:47 PM
Omio's Avatar
Omio Omio is offline
Banned
 
Join Date: February 25, 2006
Location: London, UK
Favorite Player: Only Ashraful & Me
Posts: 4,428

Part 3:

১ম ও
২য় পর্বের পর-

অনেকেই বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করেছেন সাকার জন্ম ও পরিবার নিয়ে কথা বলছি দেখে । অনেকেই আবার মনে করছেন এই প্রকাশ করাটা প্রয়োজনীয় । আমি আমার অবস্থান থেকে একটি কথা খুব স্পস্ট বলি, একটি মানুষের জন্মই আসলে মূল কথা । কিভাবে হলো কিংবা কিভাবে আসলো এই ব্যাপারটি ঠিক ওই অর্থে সমাজ জীবনে কোনো প্রভাব ফেলে না ঠিক যতক্ষণ না ওই মানুষটির তার জন্ম সঙ্ক্রান্ত বেদনায় অন্যকে বেদনাসক্ত করে না তোলেন । আপনারা এখন ভাবছেন আবেগে আমি যতই সাকাকে পশু বলি, একটি মানুষকে আসলে কোনভাবেই এই উপাদান গুলো দিয়ে বিচার করা অনুচিত । এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলি, সাকাচৌকে যদি কেউ মানুষ মনে করেন, তবে আমি নিশ্চিত , আপনি আপনার অতি মূল্যবান মানবিক অনুভূতিকে নেহাত “প্রচুর” ভেবেই জলাঞ্জলী দিচ্ছেন । সাকা,ফকা,গিকা,সাইফ কা(সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী) এরা যেই পরিমাণে গত ৫০ বছর চট্রগ্রাম তথা পুরো বাংলাদেশের মানুষের উপর অত্যাচার আর নির্যাতন করেছে এবং করছে তা আপনি খতিয়ে দেখলে, আপনি লজ্জা পেয়ে মুখ লুকাবেন । আমি যেহেতু সাকাকে নিয়ে অনেকটা বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করছি সে ক্ষেত্রে সাকার মানসিক ভাবে বেড়ে উঠা,পারিবারিক ভাবে বেড়ে উঠা এই ব্যাপার গুলো অন্তত আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । আপনি যখনই কোন একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন, আপনি লক্ষ করবেন আপনাকে অতি অবশ্যই সেখানে জিজ্ঞেশ করা হবে, আপনার ফ্যামিলির পেছঙ্কার কথা, তথ্য,ইতিহাস । কখনো সরাসরি কিংবা কখনো জানতে চাওয়ার ছলে । এর কারন কি ? মনোবিজ্ঞানীরাও এই ধরনের পরীক্ষা গুলোর ক্ষেত্রে খুব জোর দেন তার বংশগতি ও তার ধারাগুলোর ক্রমান্বয় পর্যালোচনার প্রয়োজনে । আমার ধারনা এই সিরিজের কোন না কোন পর্যায়ে আপনারা সবাই আমার সাথে একমত হবেন যে সাকার পশুত্বের এই বিপর্যয় মূলত তার ফ্যামিলির ভয়াবহ প্রভাবেই হয়েছে বা কিছুটা হলেও দায়ী । তবে আমি আসলে অবাক হয়েছি একটা কথা ভেবেই যে, সাকাকে এখনো অনেকেই মানুষ মনে করেন । জানিনা ঠিক কি কারন হলে সাকাকে মানুষ নামটি দিয়ে মানুষ নামটির অপমান করা যায় । যারা এখনো মানসিক বিকাশের সাথে পরিবারের সম্পর্কটি ধরতে পারেন নি তাদের বলব নীচের এই লিঙ্ক গুলোতে গিয়ে একটু কষ্ট করে পড়ে নিতে ।
http://www.physorg.com/news166117883.html
http://genetics.emory.edu/pdf/Emory_...al_Illness.PDF
http://www.medicalnewstoday.com/articles/156634.php
http://uk.answers.yahoo.com/question...4072157AAHkQpY
আশা করি এই তথ্যগুলো আপনাদের সামান্য হলেও আমার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একসাথে চলবার প্রয়াস পাবে ।

বিগড়ে যাওয়া মানে এই নয় যে সাকা (যার পারিবারিক নাম খোকন )হঠাত করেই একদিন মাদকাসক্ত হয়ে গেলো কিংবা মানুষ খুন করা শুরু করলো অথবা মেয়েদের ধরে ধরে ধর্ষন শুরু করল । এই বিগড়ে যাওয়া হলো মাথার ভেতর ইঞ্জেক্ট করে দেওয়া ফকার পারিবারিক রেওয়াজ ও দম্ভ । “আমরা চৌধুরী, আমরা হলাম এই চট্রগ্রামের পালন কর্তা,” এই ব্যাপার গুলো মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া । সাকার জন্ম ইতিহাসের কারনেই পারিবারিক ভাবেই এই পশুটি কিছুটা নিগৃহীত ছিল, সে সময় থেকেই তার আরো দুই ভাই গিয়াসুদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে গিকা ও সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাইফুকার সাথে তার শৈশব কালীন দূরত্ব পারিবারিক ভাবেই একটি সুক্ষ্ণ সীমানা টেনে দেয় যা ধূর্ত সাকার কখনই বুঝতে সমস্যা হয়নি । ফকার অত্যন্ত প্রিয় পূত্র হবার সুবাদে অবশ্য এইসব পারিবারিক টানাপোড়নে সাকা বার বারই পার গেছে । ফকা পারিবারিক এই জটিলতা বুঝতে পেরে ১৯৫৭ সালে তাকে একবার পাঞ্জাবের সাদিক’স মাধ্যমিক স্কুলে পাঠিয়ে দেয় , অবশ্য তার পরের বছরই ফকা তাকে ফিরিয়ে এনে চট্রগ্রামের সেন্ট প্লাসিড স্কুলে ভর্তি করায় । নবম শ্রেণীতে পড়বার সময় একজন সম্মানিত স্কুল শিক্ষককে বন্ধু-বান্ধব সহ নির্যাতনের অভিযোগে সাকাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয় । কিন্তু প্রভাবশালী বাবার ছত্র ছায়ায় বিষয়টি মিটমাট করা হয় এবং পরবর্তীতে সেখান থেকেই সাকা মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করে ।সাকা তার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে শেষ করে চলে যায় পাকিস্থানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৬৮-৭০) যেখান থেকে এই পশুটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী করায়ত্ত করে ।
সাকার বাবা ফকা চৌধুরী বৃটিশ শাষনামলের শেষ দিকে তখনকার চলতে থাকা ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রাখে এবং ষাটের দশকে আইয়ুব খানের সামরিক শাষনের সময় মন্ত্রীসভার সদস্য হয়। পরবর্তীতে তাকে ততকালীন অবিভক্ত পাকিস্তানের কনভেনশন মুসলিম লীগের স্পীকার (২৯-১১-১৯৬৩ থেকে ১২-০৬-১৯৬৫) বানানো হয় ( এই কনভেনশন মুসলীম লীগ সামরিক শাষক আইয়ূব খানের মাধ্যমে ১৯৬২ সালে গঠিত হয় মুল মুসলীম লীগ থেকে সরে এসে ) । প্রবল পাকিস্তান প্রীতি আর পাকি পা চাটার পুরষ্কার স্বরূপ ফকা ধীরে ধীরে রাজনীতির মূল ক্ষেত্রে তার অবস্থান তৈরী করে নেয় ।এ সময়ই রংপুর সদরে তার নির্দেশে ছাত্র আন্দোলনের ওপর অমানুষিক অত্যাচার চালানো হয় । চট্টগ্রামে বিরোধীদের বিরুদ্ধে লালদীঘির ময়দানে তার গুণ্ডাবাহিনীকে সে আহ্বান করে ‘শুককুয্যা কডে’ চিৎকারে। তার এ হুঙ্কার ছিল পাকিস্তানের তৎকালীন রাজনীতির একটি ব্যাপক আলোচিত ঘটনা । এখানে জেনে রাখা দরকার বৃটিশদের আজ্ঞাবহ সাকার দাদা ছিলো ততকালীন পুলিশের দারোগা (পরবর্তীতে দূর্নীতির দায়ে বহিঃষ্কৃত )। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে,পাকিস্তান পর্বের শুরুর দিকে ১৯৪৮ সালে ফকার গুদাম থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ের ১১৫ মণ তামার তার উদ্ধার হলে বেঙ্গল ক্রিমিনাল ল’ এ্যামেন্ডমেন্ট এ্যাক্টে তাকে ১০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ সপ্তাহের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। ফজলুল কাদের চৌধুরী রাজনৈতিক পরিচয় দেখিয়ে হাইকোর্টের মাধ্যমে দণ্ড মওকুফ করানোর চেষ্টা করলে বিচারপতি তার আবেদন মঞ্জুর না করে বরং তার সাজা আরও বাড়িয়ে অর্থদণ্ডের পরিবর্তে ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন । তথ্য পত্রে এই মামলাটি ফজলুল কাদের চৌধুরী বনাম ক্রাউন নামে লিখিত আছে (২ , ঢকা ল’ রিপোর্ট ১৯৫০ )
একটা ব্যাপার এখন বেশ সংক্ষেপে নিয়ে আসা যায়,

১। সাকা তার জন্ম সঙ্ক্রান্ত উত্থাপিত উতসে বরাবরি একটা হীন মানসিকতায় ভুগত ( যেহেতু পারিবারিক ভাবে ও পরিবারের বাইরে বিভিন্ন সময়ে ও স্থানে তাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে এটি বুঝিয়ে দেয়া হতো এবং বর্তমানে তার নজির আমরা পাই সম্পত্তি সঙ্ক্রান্ত বিরোধে পুরো ফ্যামিলির তার বিরুদ্ধে চলে যাওয়া যা সামনে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে )
২।সাকার বাবা ফকার প্রবল পাকিস্থান প্রীতি আর তার বিপরীতে তীব্র হিন্দু বিদ্বেষ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি অচিন্তনীয় আক্রোশ ও সন্দেহ ।
৩। ফজলুল কাদের চৌধুরীর দূর্নীতি
৪।সাকার দাদার দূর্নীতি (দূর্নীতির দায়ে বহিষ্কৃত দারোগা )

এই ব্যাপার থেকে একটা সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, জন্ম পরিচয় সঙ্ক্রান্ত টানা-পোড়েন, পারিবারিক দূর্নীতি ও লুটপাট,অন্য ধর্মের লোককে কিংবা যে কোন মানুষকে ছোট করে দেখা, প্রবল অহমিকায় এক ধরনের স্নবিশ আচরণ সাকার পারিবারিক শিক্ষা । সুতরাং এই ব্যাপারগুলো যে একধরনের সামাজিক অপরাধের পর্যায়ে পড়ে কিংবা সামাজিক অবকাঠামোর সাধারণ চিন্তা ও চেতনার বাইরে পড়ে তা কখনই সাকা জানতে পারেনি ।যেহেতু রাউজান ও গহিরা বরাবরই ছিলো হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত অঞ্চল, সুতরাং ফকার এই একটি চিন্তাই তার রাজনীতি দর্শনে স্থান পায় যে
, ভারত থেকে আসা এইসব হিন্দু তাকে কখনো ভোট দিবে না বা তাদের সমর্থন পাবে না । সে অঞ্চলে ওইসময় অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যাক্তি ছিলেন শ্রী নতুন চন্দ্র সিংহ । বিপুল দারিদ্রে্র পরেও তাঁর এই জনপ্রিয়তা বড় পশু ফজলুল কাদের চৌধুরীকে বরাবরের মতই ভেতরে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিতে থাকে যা কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের জায়গা নিয়ে নূতন বাবুর সাথে তার সংঘাত দেখে অনুমেয় হয় এবং ১৯৭১ সালে তাঁকে হত্যার মাধ্যমে (যা পরে বিস্তারিত লেখা হবে)ফকার ভেতরকার হিংস্রতা ও আক্রোশ আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারি । একটি, মজার তথ্য এখনই বলা উচিত যে, সে সময় ফকা চৌধুরীর বাড়িতে শুধুমাত্র চট্রগ্রামের আঞ্চলিক এবং তার বাইরে উর্দূতে কথা বলবার কঠিন নিয়ম ছিলো । সাকা চোধুরীর বেড়ে ওঠা এই ধরনের একটি অসুস্থ আবহের মধ্যে দিয়েই হয় । পারিবারিক সূত্র থেকে পাওয়া একটি তথ্য আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে যা হলো,সাকার নামে ছোট বেলা থেকেই প্রচুর অভিযোগ আসত । বিভিন্ন জনের সাথে মারামারি, দল বল সহ পিটানো, নির্যাতন এবং এই ব্যাপার গুলো নিয়ে ফকার বাসা পর্যন্ত বিচার চাইতে আসার সাহস কারো ভেতর ছিলো না । সুতরাং শৈশব আর কৈশোর থেকে সাকা পেয়ে যায় মানুষ কে মারবার ও আক্রমণ করবার এক পশুত্বের লাইসেন্স । জহুরী যেমন স্বর্ণ চিন্তে ভুল করেনা তেমনি বড় পশু ফকাও ছোট পশু সাকা কে চিনতে ভুল করেনি ।ফকা চৌধুরী ঠিকই বুঝতে পেরেছিলো যে তার পশু মনের সত্যকারের ধারক ও বাহক হতে পারে একমাত্র সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে খোকন ।বাবা ফকাচৌ এর আদর্শের হাত ধরে সাকা ক্রমাগত দূর্ধর্ষ হতে থাকে ।
১৯৭১ সালের এপ্রিলের শুরুতে সাকার পিতা ফকা চৌধুরী চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বৈঠক করেন পাক সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার শিঘ্র ও লে. কর্নেল ফাতেমির সঙ্গে এবং এই বৈঠকেই ফকা চৌধুরী প্রণয়ন করেন বাঙালি নিধনের নীলনকশা। ১০ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে এই নির্দেশনার সূত্রধরে পাক সেনাবাহিনী বাঙালি নিধন অভিযান শুরু করে।

আমি প্রথম পর্বের দুই নাম্বার অধ্যায়ে এই বলে শুরু করেছিলাম যে, ১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল নুতন চন্দ্র সিংহ কে হত্যা করা দিয়ে দিয়ে যদি সাকার খুনী জীবন শুরু করা যেত, তবে নিজেকে সামান্য তম হলেও প্রবোধ দেয়া যেত এই ভেবে যে, সাকা পশুটি আগে মানুষ ছিলো । কিন্তু সাকা তার মানুষ হবার ধাপ গুলো হারিয়েছে পারিবারিক আবহ আর তার পশু বাবা ফকা চৌধুরীর জীবনের রস আস্বাদন করে করে । সাকার কথা বলতে এসে এই যে এত শীবের গীত গাইলাম তার মূল উদ্দেশ্য ছিলো সাকার পারিবারিক কাঠামোর সাথে, চিন্তা ও চেতনার সাথে আপনাদের জানানো যাতে করে আপনাদের এই নরপশুটিকে ভুল না হয় । তারপরেও সাকার পারিবারিক জীবনের এই কান টানা টানি অনেকের মন পিঞ্জিরে আবেগ ও দুঃখ স্রোত হয়ে আমার মন মগজ পিঞ্জিরে বার বার প্রশ্ন করে যাচ্ছে এবং আমি এই আবেগ দেখে যারপরনাই অভিভূত !
১৯৭১ সালে্র ১৩ই সাকাচৌ তার পশু জীবনের একটি নতুন রূপ রেখা আমাদের সামনে তুলে ধরে যে , সাকা আসলে “শুধু” পশু না । জন্ম ও পরিচয়হীন ভাগাড়ে জন্ম নেয়া একটি বিভতষ ও হিংস্র পশু । ২০ বেলুচ রেজিমেন্টের নেতৃত্ব দেয়া মেজর শরাফত চারটি ট্যাঙ্ক ও এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে শ্রী কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয় চত্বরে প্রবেশ করে । সৈন্যদের সাথে পশু সাকা ও আর কিছু রাজাকারো সেখানে গাড়িতে করে আসে । কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয় সমগ্র গহিরা,রাউজানে মানুষের উপকারে নিয়োজিত ছিলো মূলত তাদের দাতব্য কর্মকান্ডের জন্য । এছাড়াও বাবু নুতন চন্দ্র সিংহএর তত্বাবধানে সেখানে কুন্ডেশ্বরী বিদ্যাপীঠ স্থাপিত হয় যেখানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব ছেলে মেয়ারাই পড়তে আসত । আগেই বলেছি, নুতন চন্দ্র সিংহ ছিলেন সেখানকার অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যাক্তি । মানুষের জন্য ওই অঞ্চলে তার অবদান ছিলো প্রবাদের মত । গ্রামের লোকেরাও এই কুন্ডশ্বরী ঔষধালয়ে বিভিন্ন ভেষজ় গাছ গাছড়া যোগার করে দিয়ে কিছু টাকা উপার্জন করতেন । দেশ ভাগের পর অনেক হিন্দুই দেশ ছেড়ে চলে গেলেও নুতন চন্দ্র সিংহ থেকে যান দেশের টানে আর মানুষের টানে ।২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর প্রায় ৪৭ জন অধ্যাপক সস্ত্রীক আশ্রয় নিয়েছিলেন কুন্ডেশ্বরী ভবনে । তাঁদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, ড. এ আর মল্লিক, ড. আনিসুজ্জামান প্রমুখ। পাকবাহিনী চট্টগ্রাম দখলের পর এরা সবাই ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়ে যান । বাবু নূতন সিংহকেও যাওয়ার কথা বলেছিলেন সবাই । উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘যদি মরতেই হয় দেশের মাটিতেই মরবো।’ পরিবারের সবাইকে সরিয়ে দিয়ে নিজে কুন্ডেশ্বরী মন্দিরে অবস্থান করছিলেন। পাকসেনা আসতে পারে অনুমান করে উঠানে চেয়ার-টেবিলও সাজিয়ে রেখেছিলেন ।নতুন চন্দ্র পাক সেনাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে কুন্ডশ্বরী ঔষধালয় এবং সংলগ্ন কলেজের কর্মকান্ড ঘুরিয়ে দেখান এবং তাদের কাজকর্ম ব্যাখ্যা করেন । মেজর শরাফত নতুন চন্দ্র সিংহএর সমগ্র প্রতিষ্ঠান এবং তার বিদ্যাপীঠের কর্মকান্ডে সন্তুষ্ট হয়ে তার সব সৈন্য বাহিনী নিয়ে চলে যাবার জন্য ওঠে । কিন্তু সাকা চৌধুরী মেজর শরাফতকে জানায় তার বাবার কাছে খবর আছে যে নতুন বাবু এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিচ্ছেন,খাওয়া দাওয়া সরবরাহ করছেন । একে বাঁচিয়ে রাখা অত্যন্ত ঝুঁকি পূর্ণ । এর পরেই মেজর শরাফতের হুকুমে বাবু নূতন চন্দ সিংহ কে তিনটি গুলি করা হয় যার একটি তার বাম চোখের নীচে লাগে ,একতি লাগে বুকে আরেকটি বাম হাতে । পশু সাকা তার বাবার ইচ্ছা তার পশু বাবার প্রতিদ্বন্দীর মৃত্যূ নিশ্চিত করতে এই ৭০ বছরের বৃদ্ধের বুকে আরো কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে । এই খবর দাবানলের মত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং গহিরা ও রাউজানের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক শোকের ছায়া নেমে আসে । ১৩ ই এপ্রিল ওই একই সৈন্য বাহিনী নিয়ে সাকা ও তার দলবল গহিরার আরেক বিশিষ্ট অধিবাসী চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসের বাড়ী গিয়ে তার উপর অকথ্য নির্যাতন চালায় তার ছেলে দয়াল হরি বিশ্বাস কে বের করে দিতে, এবং চালের ড্রামে লুকায়িত হরি বিশ্বাস কে তার বাবার সামনেই বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় । এখানেও একটি তথ্য দেয়া প্রয়োজন যে, ভোটের সময় প্রকাশ্যে এই ছাত্র নেতা ফকা’র বিরুদ্ধে প্রচারণায় নেমেছিলো ।ওই একই দিন সাকা পাকবাহিনীর এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে রাউজানের প্রায় দুশ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে । এর দুদিন পর ১৫ এপ্রিল সাকা আবারও এক প্লাটুন পাক সৈন্য সহযোগে রাউজানে অভিযান চালায় । নোয়াপাড়া ইউনিয়নের পথের হাটের আওয়ামী লীগ কর্মী হানিফের বাড়িতে ঢুকে তাকে হত্যা করে । জ্বালিয়ে দেয় জহুর আহমেদ চৌধুরীর জামাতা ও নোয়াপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সম্পাদক ইজহারুল চৌধুরীর বসতবাড়ি । এছাড়াও ওই দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ভিপি আবদুর রব এবং বঙ্গবন্ধু সরকারের শ্রমমন্ত্রী জহুর আহমদ চৌধুরীর পুত্র ছাত্রলীগ নেতা খালেদকে ধরে এনে সাকার নির্দেশে হত্যা করা হয়। এরপর সাকার নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী ঊনসত্তর পাড়ায় প্রবেশ করে ১৭০ জন নারী-পুরুষকে একটি পুকুর পাড়ে জড়ো করে হত্যা করে। সাকা সঙ্গী সেনাদের জানিয়েছিলেন, এরা সবাই মালাউন এবং ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সাকাদের গুড হিলের বাসা ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান নির্যাতন কেন্দ্র ।১৯৭২ সালের ৮ই জানুয়ারী প্রকাশিত দৈনিক বাংলায় একটি রিপোর্টে সাকা চৌধুরীর যুদ্ধবিরোধী কর্মকান্ড প্রকাশিত হয়, “সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী এবং তার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী শত শত যুবকদের ধরে এনে চট্টগ্রামে তাদের গুড হিল বাংলো-তে নিয়ে আসতো এবং তাদেরকে নির্দয়ভাবে নির্যাতন করতো। সেইসব হতভাগ্য লোকদের মধ্যে ছিলেন শহীদ ডাঃ সানাউল্লাহ্র পুত্র। ১৯৭১ সালের ১৭ই জুলাই সাকাচৌ ছাত্রনেতা ফারুককে ধরে আনে এবং পাকিস্তানী সেনাদের সাহায্যে তাকে হত্যা করে ।
“একাত্তরের জুলাইয়ে আমি, মুক্তিযোদ্ধা জুনু পাগলা, সৈয়দ ওয়াহিদ ও মিরাজ নগরীর হাজারী লেনের একটি পোড়া বাড়িতে বসে বৈঠক করছিলাম। সাকা এ খবর পেয়ে সাঙ্গপাঙ্গদের দিয়ে পুরো বাড়ি ঘেরাও করে আমাদের বন্দি করে গুডস হিলে নিয়ে যায়। টানা ১৪ দিন আমাদের ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। গুডস হিলে বন্দি ছিল আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা। নির্যাতনের ফলে ওষ্ঠাগত বন্দিরা পানি খেতে চাইলে সালাহউদ্দিন কাদের প্রস্রাব করে মুক্তিযোদ্ধা তা পান করতে বাধ্য করত।”। সাকা ও তার পিতা ফজলুল কাদের (ফকা) এর গুড হিলসের টর্চার চেম্বারে নির্যাতিত রয়টার্সের সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন নির্যাতনের এরকম বর্ননা দিয়েছেন।

“গুডস হিলের নির্যাতন কক্ষে ছিল একটি টেবিল। ওই টেবিলের ওপর গাঁথা ছিল তিন ইঞ্চি মাপের অসংখ্য পেরেক। আর বন্দিদের সেই পেরেকের ওপর শুইয়ে ওপর থেকে কাঠের তক্তা দিয়ে চেপে ধরা হতো। ফলে বন্দিদের সারা শরীর ক্ষত-বিক্ষত ও রক্তাক্ত হয়ে পড়ত।মৃ্ত্যু পর্যন্ত অপেক্ষাই ছিল তাদের ভবিতব্য।” আরেক নির্যাতিত ফজলুল হক সওদাগরের ভাষ্য।
সাকা চৌধুরী, তার পিতা ফকা চৌধুরী ও তার সহযোগীরা চট্টগ্রামে তাদের ‘গুডস হিলে’ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন ও হত্যা করেছে। এমনকি অনেক মেয়েদেরও তারা ধরে এনে পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে তুলে দিয়েছে তাদের মনোতুষ্টির জন্য । ১৯৭১ সালের মে থেকে নভেম্বর – দীর্ঘ সাত মাস সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী চট্টগ্রাম শহরের গুডস হিলে তার বেসরকারি জল্লাদখানা পরিচালনা করে। প্রতিদিন চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুক্তিযোদ্ধা কিংবা মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক বা তাদের আশ্রয়, চিকিৎসা, ওষুধপত্র ইতাদি দিয়ে সহায়তাকারী বলে যাদেরই সন্দেহ করা হতো তাদের ধরে এনে গুডস হিলের এই ক্যাম্পে অমানুষিক নির্যাতন করা হতো-প্রতিদিনই দুই-একজনকে হত্যা করা হতো এবং তাদের লাশ রাতে কারফিউ চলাকালে গাড়িতে করে নিয়ে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দিয়ে আসা হতো।

১৯৭২ সালের ২৯ শে জানুয়ারী মুজিব সরকারের সময় নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যা মামলা দায়ের হয়েছিলো । নূতন চন্দ্রের ছেলে সত্যরঞ্জন সিংহসহ মোট ১২ জন সাক্ষী ছিলেন মামলায় ।মামলাটির ক্রমিক নম্বর ছিল ৪১(১)৭২ এবং ৪৩(১)৭২ । মামলার এফআইআর নং ইউ/এস/৩০২/১২০ (১৩)/২৯৮ বিপিসি/। ৭২ সালের ২৯ জানুয়ারি বিচার শুরু হয়। আসামিদের মধ্যে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ পলাতক ছিল ৫ জন । পশু ফকা চৌধুরীসহ ৫ জন ছিল কারাগারে।ফকা অবশ্য এই মামলার কারনে ধরা পড়েনি, ১৯৭১ সালের ১৮ই ডিসেম্বর ১০২ কেজি সোনা ও সাত লক্ষ টাকা নিয়ে আনোয়ারা দিয়ে একটি ট্রলারে করে বার্মা সীমান্তে পালাবার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে জাঙ্গিয়া পরা অবস্থায় ধরা পড়ে এবং তাকে অমানুষিক ভাবে মারধোর করবার পর পুলিশে সোপর্দ করা হয় ।জেলে থাকা অবস্থাতেই পশু ফকার, পশু যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং পশুটি এই ধরাধাম কৃতজ্ঞ করে পটল তোলে ।
১৯৮৩ সালে সত্যরঞ্জন সিংহ মৃত্যুবরণ করায় এবং ইতিমধ্যে সাকা আবার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে প্রতাপশালী হয়ে উঠলে এবং পশুটির ক্রমাগত হুমকির কারনে পরিবারটি মামলা চালানো থেকে বিরত থাকে ।

( সামনের পর্ব গুলোতে আমি সাকার রাজনৈতিক পোল্টিবাজি, বংগবন্ধুর পরিবারের সাথে তার অন্তরংগ স্মপর্কের কথা, তার বিভিন্ন সময়ে দেয়া বিভিন্ন ব্যাঙ্গাত্নক ও ঔদ্ধত্বপূর্ণ মুখ নিঃসৃত বর্জ্য,বর্তমান সময়ে তার সকল কর্মকান্ড, চট্রগ্রামে তার রাজনীতি করবার পদ্ধতিগুলো,পত্রিক য় তার নিজেকে প্রমোট করবার পদ্ধতি,চোরাচালানী কিছু চমকপ্রদক তথ্য,বর্তমান রাজনীতিতে তার টিকে থাকবার কৌশল,তার আন্তর্জাতিক গডফাদার, তার শক্তির উতস , সাকার পূত্র,কন্যা ও স্ত্রী’র হাল হকিকতসহ অন্য সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত লিখার চেষ্টা করব । আশা করছি আপনাদের সাকা পাঠ ঘৃনায় ঘৃনিত হয়ে উঠছে …)
চলবে…






Reply With Quote