গণিত থেকে গন্তব্যে
ইমাম হাসান | তারিখ: ১১-০৫-২০১১
দুই বন্ধু ইশফাক ও দীপাঞ্জন
দীপাঞ্জন রায় ও হক মোহাম্মাদ ইশফাক, দুই বন্ধু। পরিচয় সেই স্কুলে পড়ার সময় থেকে। ইশফাক পড়তেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে আর দীপাঞ্জন ঢাকার সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে। অবাক লাগছে, তাই না? আসলে দুজন দুই জায়গায় পড়লেও দুজনের প্রেম ছিল একদিকেই। এ প্রেম গণিতের। প্রতিবছর গণিত উৎসবের জন্য তাই অন্য সবার মতো উন্মুখ হয়ে বসে থাকতেন তাঁরা। এই উৎসবেই বন্ধুত্ব। তারপর প্রতিবছর ক্যাম্পে থাকা, সব ছিল অনেক মজার।
‘গণিতের সঙ্গে ভালো লাগতে থাকে পদার্থ ও রসায়নবিদ্যাও। গণিত ক্যাম্পের দিনগুলোয় মাহবুব মজুমদার, মুনির হাসান, জাফর ইকবাল, কায়কোবাদ স্যারের মুখে বিজ্ঞানের বড় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনে ইচ্ছা করত পড়তে যাব। পরক্ষণে আবার ভয়ও লাগত, পারব তো? শেষে কখন যেন আস্থা ফিরে পেলাম, পারব।’ বলছিলেন ইশফাক। ২০০৯ সালে দীপাঞ্জন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের শ্রেষ্ঠ হওয়ার খেতাব অর্জন করেন। আর ইশফাক বাংলাদেশ গণিত দলের সঙ্গে ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০ সালে ঘুরে এসেছেন স্পেন, জার্মানি, কাজাখস্তান। ২০০৯ ও ২০১০ সালে অর্জন ছিল অনারেবল ম্যানশন। ২০১০ সালে এইচএসসিতে সব বিষয়ে এ+সহ দুজনেই অর্জন করেন জিপিএ-৫। আবেদন করেন বিশ্বের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতাপূর্ণ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া বেশ কষ্টকর। তার পরও তাঁরা চান্স পেয়েছেন চারটি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইশফাক চান্স পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় আর ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় চাহিদা পরিমাণ (শতভাগ বা তার কাছাকাছি) বৃত্তি দিয়ে তাঁকে ভর্তির সুযোগ দিয়েছে।
ইশফাক বলেন, ‘তবে আমার পছন্দ স্টানফোর্ড। কারণ, ওখানে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে ম্যাথ, ফিজিক্সও অনেক বেশি স্ট্রং। পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্রিং থিউরির অন্যতম প্রবক্তা অধ্যাপক লিওনাড সাসকিন্ড, যিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।’
ইশফাকের কাছ থেকেই জানা গেল ১৯৯৭-৯৮ সালে ফিজিক্সে নোবেল পাওয়া অধ্যাপক ববলাফলিন ও অধ্যাপক অসেররফও হবেন তাঁর শিক্ষক। চার বছরের এই স্নাতকে তিনি ম্যাথ ও ফিজিক্স একসঙ্গে পড়তে চান। স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই তৈরি হয়েছে গুগল বা ইয়াহুর মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান। ইয়েল, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ও ইশফাকের চাওয়া মতো বৃত্তি দিতে রাজি। ইশফাক বলেন, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে ফিজিক্সে নোবেল পেয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ৮৮ জন নোবেল পেয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
এত কিছুর পরও ইশফাক বেছে নিয়েছেন স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
আর দীপাঞ্জন রায় সুযোগ পেয়েছেন আমেরিকার পারডু বিশ্ববিদ্যালয় ও কার্লটন কলেজে এবং কানাডার ম্যাকগিল ও ওয়াটার লু বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে দীপাঞ্জন বেছে নিয়েছেন ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়কেই কারণ, তাঁর ইচ্ছা কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ। এ ছাড়া সেখানে আন্ডারগ্র্যাজুয়ে দের জন্য বেশি সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। দীপাঞ্জন বলেন, ‘ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেওয়ার কারণ বায়োলজিক্যাল ফিল্ডে এদের বেশ সুনাম। তা ছাড়া আমারও কম্পিউটার পড়ে এই সাইটে কাজ করার ইচ্ছা।’
নতুনদের জন্য
যাঁরা ইশফাক বা দীপাঞ্জনের মতো উচ্চশিক্ষায় বাইরে যেতে চান, তাঁদের উদ্দেশে দুজনের মন্তব্য এ রকম—স্যাট আর টোয়েফলে মোটামুটি ভালো একটা স্কোর। নেট থেকে ফর্ম নামিয়ে তা বেশ যত্ন নিয়ে পূরণ করতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসি সনদ পাঠাতে হবে প্রিন্সিপালের স্বাক্ষর ও সিলসহ। আর রেজাল্ট থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তোমার ফর্মে লেখা বিভিন্ন রচনা কিংবা কোনো বিশেষ গুণ, যার স্বীকৃতি তোমাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলবে। আবেদন করতে হবে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে, ফলাফল হয় মার্চ-এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে। তবে অবশ্যই এক বছর আগে থেকে মন স্থির করে প্রস্তুতি নেওয়া ভালো। আবেদনের সময় সুপারিশ চিঠিটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সুপারিশ দিয়ে আবেদন করা উচিত।
(Source:
http://www.prothom-alo.com/detail/da...17/news/153241)